শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া । Shilaidaha Kutibary

শিলাইদহ, Kushtia, 7010 ,Bangladesh
শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া । Shilaidaha Kutibary শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া । Shilaidaha Kutibary is one of the popular Civilization Museum located in শিলাইদহ ,Kushtia listed under Museum/art gallery in Kushtia , History Museum in Kushtia ,

Contact Details & Working Hours

More about শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া । Shilaidaha Kutibary

Shilaidaha Rabindra Kutibari
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রামের নাম শিলাইদহ। এই গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। শিলাই গ্রামেই কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুঠিবাড়ি অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথ তাঁর যৌবনকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় এখানে কাটিয়েছেন।

কোথায় অবস্থিত

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় শিলাইদহ কুঠিবাড়ি অবস্থিত।

কুঠিবাড়ির পূর্বকথা

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম শিলাইদহ। পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে উঠা গ্রামটির পূর্ব নাম খোরশেদপুর। রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন। এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা,চৈতালী,গীতাঞ্জলি ইত্যাদি। এখানে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে এসেছেন জগদীশ চন্দ্র বসু,দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরী সহ আরো অনেকে।



কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী থেকে কুষ্টিয়াগামী বাসে করে কুষ্টিয়াতে পৌঁছানোর পর বাস কিংবা যেকোন যানবহনে করে শিলাইদহ যাওয়া যায়।



দেখতে পাবেন

কবিগুরু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতই আলোকিত এক নাম। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধারণ করে কুষ্টিয়া তথা দেশবাসী আজ গৌরবান্বিত। পদ্মার তীরবর্তী সবুজে ঘেরা শিলাইদহ গ্রামখানি কবির ভাল লাগত। তাঁর হৃদয়ে কাব্যভাবের স্পন্দন জাগাত। ‘গীতাঞ্জলী’র কাব্যরস যে তিনি শিলাইদহ থেকেই পেয়েছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে শিলাইদহ গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। এ গ্রামেই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি, যা ছিল এককালের অত্যাচারী নীলকরদের নীলকুঠি। পরে তা কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের জমিদারের কুঠিবাড়ী (বাসস্থান) হিসেবে পরিচিত হয়। পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীরঘেরা ৩৩ বিঘা জমির ওপর তিনতলা এই কুঠিবাড়িটি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিলাইদহের বুকে। তবে মূল বাড়িটি রয়েছে আড়াই বিঘার ওপর। চারদিকে আম বাগানের ছায়াঘেরা স্নিগ্ধ পরিবেশ। কাছেই পদ্মা। সব মিলিয়ে এক মায়াবী পরিবেশ। ২৫ বৈশাখ কবি গুরুর জন্ম দিন। প্রতি বছর এই দিনটি এলেই বদলে যায় কুঠিবাড়ির দৃশ্য। কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি,সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজার হাজার দর্শনার্থীর। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে ওঠে স্থায়ীভাবে তৈরি দু’টি মঞ্চ। এসব আয়োজনকে ঘিরে পুরো কুঠিবাড়ী চত্বর হয়ে ওঠে আলোক ঝলমল। ফ্যাকাসে হয়ে পড়া দেয়ালে পড়ে চুনের আচড়। জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে তিনদিন ধরে চলে অনুষ্ঠানমালা। এরপর আবার বদলে যায় কুঠিবাড়ির চিত্র। ফিরে যায় সেই আগের অবস্থায়। খাঁ খাঁ করতে থাকে দুটি মঞ্চ। হয় না কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কমে যায় দর্শনার্থীর ভিড়। তবে তা শূন্য হয় না কোনদিনই। কবির যখন ভরা যৌবন এবং কাব্য সৃষ্টির প্রকৃষ্ট সময়,তখনই তিনি বিচরণ করেছেন শিলাইদহে। কখনও একাকী, কখনও স্ত্রী, পুত্র-কন্যা নিয়ে এসেছেন শিলাইদহে,পেতেছেন ক্ষণিকের সংসার;ঘুরে বেড়িয়েছেন বোটে, পালকিতে। যে লেখার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হন; নোবেল পুরস্কার পান, সেই লেখার স্থান শিলাইদহ হওয়ায় কুষ্টিয়াবাসী তথা দেশবাসী গর্বিত। শিলাইদহে বসে রবীন্দ্রনাথ যেসব গান-কবিতা লিখেছেন, তার মধ্যে কুঠিবাড়ির পাশে বকুলতলার ঘাটে বসে লেখা “যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে” গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর” “শিলাইদহে বসে লেখা “আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ”, “কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি” প্রভৃতি। কবিগুরু শিলাইদহে ছিলেন ১৯২২ সাল পর্যন্ত। এই সুদীর্ঘ ৩০ বছর এখানে অবস্থানকালে তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।



কুঠি বাড়ির বর্ণনা

শিলাইদহ গ্রামের উত্তর প্রান্তে এক সবুজ শ্যামল পরিবেশে ৩৩ বিঘা জমির মধ্যে আড়াই বিঘা জমির উপর নয়ন জুড়ানো স্থাপত্য রীতিতে গড়া কবির তিনতলা বাড়ি। কার্ণিশে প্রাচীরের মতই পদ্মার ঢেউ খেলানো বাউন্ডারী প্রাচীর। কুঠি বাড়িতে রুম সংখ্যা আঠারো, দরজা সংখ্যা সতেরোটি, জানালার সংখ্যা ত্রিশটি। কুঠিবাড়ির তিন তলার কামরাটা ছিল কবি গুরুর লেখার ঘর। কবি এই ছাদের উপর বসে সুর্যোদয়, সূর্য্যাস্ত ও জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হতেন। এই খানে বসে কবির দু’চক্ষুকে যে সমস্ত দৃশ্য তন্ময় হতো। তা তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন। এই ঘরের জানালা দিয়ে এখন শুধু পদ্মাকে দেখা যায়। আগে পদ্মা গড়াই দুটো নদীকে দেখা যেত। কবি রবীন্দ্রনাথ তখন ঘরে বসেই শুনতে পেতেন নদীর ডাক। নদী যেন কলকল ছলছল করে কবিকে ডাকতো। কবিও সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন পদ্মার বুকে,গড়াইয়ের বুকে।

কুঠি বাড়ির আশপাশ

শিলাইদহ কুঠি বাড়ির চারদিকে ঝাউ,শিশু ও শাল বীথিকায় ঘেরা। কবি গুরুর এই পল্লী ভবনের অপরূপ মনোরম শোভা বহুদূরের পথিক কেও আকর্ষণ করে। কুঠি বাড়ির চারিদিকে ঢেউ আকৃতির প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীরের পূর্ব দিকে আম কাঁঠাল লিচু নারকেল প্রভৃতি ফলবান বৃক্ষের বৃহৎ বাগান ও পূর্ব-পশ্চিম লম্বা দীঘি। কুঠি বাড়ি ভবনের পশ্চিমে আর একটি বড় পুকুর। এই পুকুরটি শান বাঁধানো। ঘাটের প্রবেশ পথের দুধারে কবির স্বহস্তে দুটি বকুল বৃক্ষ রোপন করেন। ঐ গাছ দুটির মৃদমন্দ গন্ধ বিস্তারী নিবিড় ছায়ায় বসে কবি আপন মনে গান গাইতেন।



কুঠি বাড়ি তৈরীর উপাদান

কুঠিবাড়ির ছাদ জাপান থেকে উন্নতমানের টালি এনে তৈরি করা হয়েছিল। তিনতলার সিঁড়িটি কাঠ দিয়ে গড়ানো। রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ জার্মানি থেকে মিস্ত্রি এনে এক বিশেষ কায়দায় সিঁড়িটি তৎকালীন সময়ে তৈরি করেন কিন্তু এ সিঁড়ির প্রতিরোধ মূলক কোন বীম নেই। তিন তলা কুঠি বাড়িতে উঠার জন্যে বাহির দিয়ে আরো একটি বিশেষ কায়দায় গোল করে প্যাঁচানো লোহার একটি সিড়ি রয়েছে।



কি কি আছে বাড়ির ভিতর

কুঠিবাড়িতে কবির নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির ছবি রয়েছে। বাল্যকাল থেকে শুরু করে মৃত্যু শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত রয়েছে। আরো আছে মহাত্মাগান্ধী এন্ডুজ কবি ইয়েটসসহ বহু মূল্যবান ছবি। কবির নিজ হাতের লেখা কবিতা, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর প্রকাশিত কবির ছবি ও সনদপত্র। এমন কি কবি যেসব নাটকে অভিনয় করেছেন সেসব নাম ভূমিকার ছবি রক্ষিত। দ্বিতীয় তলাতে কবির শয়ন কক্ষে একটি পালং, ছোট একটা গোল টেবিল, কাঠের আলনা, আলমারী, কবির ব্যবহৃত চঞ্চল ও চপলা নামের দুটো স্পিডবোর্ট। পল্টুন একটি, আট বিহারা ও ১৬ বিহারা পালকি। কাঠের চেয়ার একটি, আরাম চেয়ার একটি, হাত পালকি একটি, গদি চেয়ার দুটি, সোফাসেট দুটি, টেবিল দুটি, ঘাস কাটার মেশিন একটি, চীনা মাটির তৈরি একটি ওয়াটার ফিল্টার। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ও বিভিন্ন মনীষী গ্রুপ ছবি এবং রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে আঁকা বিভিন্ন ছবি ও কবিতা লেখা। এ সমস্ত জিনিসগুলো কুঠিবাড়ির একতলা থেকে দ্বিতীয় তলা ৯টি রুমে সংরক্ষিত আছে।



একদিন বকুল তলায়

কুঠি বাড়ির চারপাশে রয়েছে ফুলের বাগান। উত্তর পাশে প্রাচীন সব আমগাছ। কুঠি বাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বকুল তলার ঘাট। এ ঘাটেই তিনি গোসল করতেন। কবি রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে বসে যেসব গান কবিতা লিখেছেন,তাহলো বকুল তলার ঘাটে বসে। যেমন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। কয়াতে বসে কবির লেখা বিখ্যাত কবিতা হেমোর দুর্ভাগা দেশ,যাদের করেছ অপমান,অপমান হতে হবে তাদের সবার সমান,গড়াই নদীতে বোটে বসে লেখা সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর। শিলাদইদহে বসে লেখা আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ, কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, হে নিরূপমা, হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে ময়ূরের মত নাচেরে, নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাই আর নাহিরে, গায়ে আমার পুলক লাগে ইত্যাদি গান কবিতা রচনা করেছেন।



কোথায় থাকবেন

কুষ্টিয়া জেলা শহরে সরকারি সার্কিট হাউজে কিংবা যে কোন আবাসিক হোটেলে রাত্র যাপন করা যাবে। সরকারি সার্কিট হাউজে রাত্রযাপন করতে চাইলে আগে থেকেই অফিসের কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।

Map of শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া । Shilaidaha Kutibary

OTHER PLACES NEAR শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া । SHILAIDAHA KUTIBARY