মানুষ তার নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে। কল্যাণময় বিষয়গুলোকে আহরণ করে যে চেতনার উন্মেষ ঘটায় তাই তার সংস্কৃতি। সংস্কৃতি অর্থ শালীন জীবন বোধ। শিক্ষা, সভ্যতা থেকে এ জীবন বোধ জন্ম নেয়। কোন জাতি তার দীর্ঘদিনের জীবন যাপনের ভিতর দিয়ে যে মানবিক মূল্যবোধ সুন্দরের পথে, কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে, তাকে সংস্কৃতি বলা হয়। অর্থাৎ কোন জাতির পরিচয় তার সংস্কৃতির মাধ্যমে। গতিময়তাই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। তাই এর নির্দিষ্ট কোন ছকে বাঁধা গতি নেই। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে এর রূপভেদ দেখা যায়, কিন্তু গুণ ভেদ নেই। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাই সংস্কৃতির মূল মন্ত্র। এটা মানুষের এমন একটা আনন্দের বাহন, যার সৌন্দর্য ও প্রেম মূল আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলেই সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটে। হিংসা-দ্বেষমুক্ত সত্য ও সুন্দরের পূজারীরাই সংস্কৃতির সাধক। সংস্কৃতি মানুষকে বিকশিত করে, আনন্দিত ও প্রেমময় করে। দেশের মাটির সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে। যে সংস্কৃতি দেশপ্রেম, মানবপ্রেম জন্ম দেয়না তা হলো অপসংস্কৃতি। বর্তমানে আমরা দেশজ সংস্কৃতি, দেশজ মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি। আমাদের সমাজে যে অপসংস্কৃতি প্রবেশ করেছে তা তরুণ সমাজের আচার- আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখলেই বোঝা যায়। তারা দেশীয় আবহাওয়ায় বিদেশী জীবনধারাকে গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অনুকরণের নাচ, গান, বিকৃত ছবি দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এগুলোর সাথে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কোন মিল নেই। সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দর করে বাঁচার তাগিদ দেয়, অপসংস্কৃতি তেমনি বিবেককে ধবংস করে এবং মূল্যবোধের মৃত্যু ঘটায়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয়, ক্ষণিকের ও চমকের। তরুণরা দেশের ভবিষ্যৎ ,এ ভবিষ্যতকে নষ্ট করার অপকৌশল হল অপসংস্কৃতিতে উৎসাহিত এবং তা বাস্তবে প্রয়োগ করা। আমাদের তরুণ সমাজের উপর অপসংস্কৃতির প্রভাব খুব বেশী। এর মূলে রয়েছে চরম দূর্নীতির রাহুগ্রাস। অধুনা সত্য ও সুন্দরকে ত্যাগ করে তরুণরা উগ্র জীবন যাপনে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে এবং চরম অবক্ষয়ের মাঝে জীবনবোধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো তরুণ সমাজ একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে বাঙালী সংস্কৃতি এবং তার জায়গা দখল করবে অপসংস্কৃতি। কাজেই,আমাদের তরুণ সমাজকে অপসংস্কৃতির হাত থেকে মুক্ত করে নিজস্ব সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব প্রতিটি সচেতন নাগরিকের। কিন্তু ব্যাক্তি উদ্যোগে কোন মহৎ কর্মকান্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সে কারণে প্রয়োজন হয় সংগঠনের। দেশপ্রেম, মেধা, মনন, কর্মদক্ষতা, সৃজনশীলতা, সাহস, উদ্যম, প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা, বিচিত্র অভিজ্ঞতা আর বহুমুখী জ্ঞানের সমাবেশ ঘটে সংগঠনের মাধ্যমে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ সংগঠনের প্রয়োজনীয়তাকে তরুণ সমাজের চিন্তাশক্তি এবং উপলদ্ধি এনে দিয়েছে সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহ। বর্তমানে দেশের সামাজিক অবস্থায় অপসংস্কৃতির আগ্রাসন এবং নিজস্ব সংস্কৃতি,কৃষ্টি,ঐতিহ্য রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে শ্র“তি’র আত্মপ্রকাশ। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন- “কদিনের জন্য জীবন? জগতে যখন এসেছিস, তখন একটা দাগ রেখে যা নতুবা গাছ-পাথর ও তো হচ্ছে মরছে ঐরূপ জন্মাতে মরতে মানুষের কখনো ইচ্ছা হয় কি? ’’ ----- ঐ দাগ রেখে যেতে চাই আমরা ।