চারআনি হাভেলি,
হয়বতনগর প্রাক্তন জমিদার বাড়ী,
কিশোরগঞ্জ।
সিপাহসালার সৈয়দ নাসিরউদ্দিন (রহঃ) ১৩তম অধস্তন পুরুষ জনাব সৈয়দ আব্দুস সোবহান সাহেবের ১ম পুত্র জনাব সৈয়দ আব্দুল্লাহ, বার ভূঞা প্রধান ঈসা খাঁ মসনদে আলার ১১তম বংশধর দেওয়ান এলাহী নেওয়াজ খান সাহেবর ১ম কন্যা দেওয়ান জমিলা খাতুন কে বিয়ে করেন । কয়েক বছরের মধ্যেই দেওয়ান জামিলা খাতুন অকাল মৃত্যু বরন করেন। নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু বরন করায় সৈয়দ আব্দুল্লাহ সাহেব শ্ত্রীর ওয়ারিশ হিসাবে পুর্ন জমিদারী ও সম্পদে চার আনা অংশের মালিক হন। মুলতঃ “চার আনী” শব্দটির উৎপত্তি এইখান থেকেই। এই চার আনার অংশ বিশেষ বর্তমান ‘চারআনী হাভেলী’র পশ্চিমের দেয়াল ঘেঁসে বার আনীর ভিতরে পরে যাহা তাঁহারই অন্য ওয়ারিশের মালিকানায় যায় এবং অবশিষ্ট অন্দরের বাহিরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়ায়ে থাকে। এই বিষয়ে এর বেশী এখানে আলোচনা তেমন প্রাসঙ্গিক নয় বিধায় আমরা ‘চার আনী হাভেলী’ সংক্রান্ত মুল আলোচনায় ফিরে যেতে চাই।
দেওয়ান জামিলা খাতুনের মৃত্যুর পর এক পর্যায়ে সৈয়দ আব্দুল্লাহ সাহেব বিবাহ করেন বৌলাই জমিদার বাড়ির সৈয়দ শাহ মোঃ সায়ফুল হক সাহেবের পুত্র সৈয়দ আব্দুল বারী সাহেবের কন্যা সৈয়দা ফরকুন্দা আক্তার খাতুন কে। সৈয়দা ফরকুন্দা খাতুন মসনদে আলা ঈশা খাঁ’র ১১তম বংশধর খোদা নেওয়াজ খানের একমাত্র কন্যা দেওয়ান রউশন আরা এঁর কন্যা দেওয়ান তাবিন্দা আক্তারের দুই কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ । দেওয়ান তাবিন্দা খাতুনের মৃত্যুর পর সৈয়দা ফরকুন্দা আক্তার খাতুন মায়ের জমিদারী থেকে ‘সাবেক চার আনীর’ অর্ধেক অংশের মালীক হন। বর্তমান ‘চার আনী হাভেলী’ নামকরন সেই ‘সাবেক চার আনী’ থেকে সৃষ্টি। উল্লেক্ষ্য যে বারআনি, চারাআনি মিলে বৃহত্তর এই হয়বতনগর হাভেলিতে যুগযুগ ধরে দেওয়ান ও সৈয়দের এক অপূর্ব সহ অবস্থান রয়েছে যা সকল মহলে প্রশংশিত।
সৈয়দ আব্দুল্লাহ সৈয়দা ফরকুন্দা খাতুনের দিকে দুই ছেলে রেখে মৃত্যু বরন করেন। তাঁহাদের মধ্যে বড় সৈয়দ রাজী উল্লাহ এবং ছোটজন সৈয়দ আতিকুল্লাহ। সৈয়দা ফরকুন্দা খাতুন জীবিত থাকাকালীন তাঁহার সম্পত্তি দুই ছেলের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে যান। মূল বাড়ীতে দুই পরিবারের স্থান সঙ্কুলান হবেনা বিধায় ছোট ছেলে সৈয়দ আতিকুল্লাহ'র জন্য 'বড়তালাব' খ্যাত বড় পুকুরের উত্তর পাড় ঘেঁষে বিশাল জায়গা জুড়ে নুতন বাড়ী তৈরী করিয়ে দেন যাহা 'নয়া বাড়ী' নামে পরিচিতি লাভ করে ।
সৈয়দ রাজী উল্লাহ তিন ছেলে এক মেয়ে যথাক্রমে সৈয়দ মোঃ রফিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ খলিলুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ সফিউল্লাহ ও সৈয়দা সবুরুন্নেসাকে রেখে অকাল মৃত্যু বরন করেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে সৈয়দ মোঃ রফিকুল্লাহ পরিবার ও জমিদারী দেখাশোনার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। সৈয়দ মোঃ খলিলুল্লাহ স্নাতক পাশ করে শিক্ষকতা ও সরকারী চাকুরিতে নিয়োজিত হন।সৈয়দ মোঃ সফিউল্লাহ ডাক্তারী ও জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। সৈয়দ আতিকুল্লাহ নিজ আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় কলিকাতা থেকে স্নাতক ও আইন পাশ করে আইনী পেশায় যোগ দেন এবং আরও বিভিন্ন ভাবে অনেক সুখ্যাতির অধিকারী হন। তিনি কীর্তিমান নয় ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মৃত্যু বরন করেন। ছেলে গন যথাক্রমেঃ সৈয়দ মোঃ সফিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ ওয়াফিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ সাদিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ ওয়াসিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ খালিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ লাইকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ তারিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ শারিকুল্লাহ, সৈয়দ মোঃ বারিকুল্লাহ। কন্যাগণ যথাক্রমেঃ সৈয়দা ফাতিনা রহমান, সৈয়দা হাসিনা আক্তার বানু ও সৈয়দা রাজিনা আক্তার বানু। বর্তমানে মরহুম সৈয়দ রফিকুল্লাহ ও সৈয়দ খলিল উল্লাহ'র বংশধর চার- আনি হাভেলীতে বসবাস রত আছে।
- সৈয়দ মাহফুয