Mezbaan Bari Banani

Dhaka, 1212 ,Bangladesh
Mezbaan Bari Banani Mezbaan Bari Banani is one of the popular Restaurant located in ,Dhaka listed under Restaurant/cafe in Dhaka , Food & Restaurant in Dhaka ,

Contact Details & Working Hours

More about Mezbaan Bari Banani

চাটগাঁ'র ঐতিহ্যবাহী মেজবান
------------------------
মেজবান বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম এলাকার বহুমাত্রিক ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব একটি অনুষ্ঠান। আঞ্চলিকভাবে চট্টগ্রামে একে মেজ্জান বলা হয় আর এই বিশেষ জাতীয় খাবারের ম্যানুতে থাকে সাদা ভাতের সাথে গরু অথবা মহিষের মাংস এবং ডাল ও হাড়ের ঝোল। মেজবান একটি ফারসি শব্দ যার সাধারণ অর্থ নিমন্ত্রণকর্তা। মেজবানের উৎপত্তির সঠিক সময় নির্ণয় করা যায় না। ১৫০০ ও ১৬০০ শতাব্দীর প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যে ‘মেজোয়ানি’ ও ‘মেজমান’ দুটি শব্দ পাওয়া যায়। হয়তো ‘মেজমান’ থেকে ‘মেজবানে’ রূপ নিয়েছে।

সাধারণত কারো মৃত্যুর পর কুলখানি, চেহলাম, মৃত্যুবার্ষিকী, শিশুর জন্মের পর আকিকা, ধর্মীয় ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী ইত্যাদি উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ মানুষের আপ্যায়নের জন্য এই মহাভোজের ব্যাবস্থা করা হয়। এসব নির্দিষ্ট উপলক্ষ ছাড়াও কোনো শুভ ঘটনার জন্য মেজবান করার রীতি আছে।

বাংলাদেশের বিশেষ এই অঞ্চল চট্টগ্রামে অথিতি আপ্যায়নে বেশ সুনাম রয়েছে। আপনি কোন লেভেল এর আত্মীয় তা বড় কথা নয় একবার এসে যখন পড়েছেন আপ্যায়িত না হয়ে যেতেই পারেননা ঠিক একই সুত্রে মেজবান আয়োজনের সময় কাছের কিংবা দুরের এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের মন ভরে খাওয়ানটাই আয়োজকদের উদ্দেশ্য এখানে থাকেনা কোন লিমিট যতক্ষণ পর্যন্তনা ডেকচী খালী হয় ততক্ষণ পর্যন্ত চলতে থাকে খাওয়ার এই আয়োজন। এ অঞ্চলে ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে মেজ্জানের মাধ্যমে সবাইকে সার্বজনীনভাবে সম্পৃক্ত করার রীতি সুদীর্ঘকাল ধরেই। মেজ্জানে গরুর মাংস ও অন্যান্য উপকরনের সাথে ক্ষেত্র বিশেষে ঘনিষ্ঠজনদের জন্য ছাগল ও মুরগির মাংস এবং মাছ এরও ব্যাবস্থা করা হয়। তবে মেজবানের মূল আকর্ষণ ও মূল পদ গরুর মাংস যা চট্টগ্রামের ভাষায় মেজ্জাইন্না গোস্ত হিসেবেই পরিচিত। এই মাংস রান্নার ধরন আলাদা, মসলাও ভিন্ন, শুধুই কি তাই…! রান্নার ডেকচি থেকে শুরু করে চুলা পর্যন্ত আলাদা। এই কাজে দক্ষ চট্টগ্রামের বাবুর্চিরা, আর তাঁরা বংশপরম্পরায় এই ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। মেজবানের রান্নার রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব এবং এর রন্ধন প্রক্রিয়ার রয়েছে বিশেষ পদ্ধতি। সাধারণ রান্নার বিপরীতে এই মাংস রান্না অনেকটা তৈলাক্ত, মশলাযুক্ত এবং কালচে রঙের বিশেষ স্বাদের হয়। রান্নার উপকরণে আছে বিশেষ মশলা যার বেশীরভাগই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত, বাবুর্চিরা রান্নায় হাতে বাঁটা মশলাই ব্যাবহার করে। কেননা অন্য কোন মশলা ব্যাবহার করলে মেজবানি রান্নার স্বাদ ঠিক মত হয়না। রান্নার জন্য প্রয়োজন বড় আকারের পাত্র(কড়াই), আর জ্বালানি হিসেবে কাঠের লাকড়ির পাশাপাশি তুষের তৈরি কালো লাকড়িও ব্যাববহার হয় ইদানীং।

এ রকম আয়োজন, চট্টগ্রামের সবকটি এলাকায়। এককালে মাটির পাত্রে এই মেজবানের আয়োজন করা হলেও বর্তমানে গ্রামের খোলা মাঠে অথবা বাড়ির উঠান বা ঘরের ছাদে প্যাণ্ডেল করে বসানো হয় সারি সারি চেয়ার টেবিল। এসব চেয়ার টেবিল সাজানো হয় খাবার পরিবেশনের জন্য। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা দলে দলে এসে যোগ দেয় এসব মেজবানে। সকলেই খেতে পারে যার যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে। এটা সার্বজনীন তাই কারো জন্য থাকে না বাধা। যতক্ষণ না খাবার তৃপ্তি না মিটবে, ততক্ষণ খাওয়া যাবে এসব টেবিলে বসে ধনী গরিব নির্বিশেষে।

বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী খাবার এখন আর নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই এর প্রসার দেশের সীমানা পেড়িয়ে বহিঃবিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের দেখাদেখি বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অন্যান্য জেলাগুলোতেও এখন মেজবানের আয়োজন করা হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চট্টগ্রাম থেকে বাবুর্চি নিয়ে যাওয়া হয় মূল স্বাদটি আস্বাদন করতে। ঢাকায় এখন বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং কর্পোরেট ফার্মগুলো তাদের বার্ষিক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে মেজবান আয়োজন করে থাকে।

Map of Mezbaan Bari Banani