আমাদের চারপাশের পরিবেশ এবং মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কোন ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক,গ্রোথ হরমোন, এন্টিবায়োটিক ইত্যাদিসহ যেকোন ধরনের রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহার না করে জৈবিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসল চাষাবাদকে অর্গানিক ফার্মিং বলে।বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে অর্গানিক বা জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে;যা পৃথিবীর মোট আবাদি জমির মাত্র তিন ভাগ।এছাড়া বিশ্বে প্রতি বছর অর্গানিক খাদ্য দ্রব্য বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতার কারণে দিন দিন অর্গানিক ফার্মিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।এর মূল উদ্দেশ্য হল কৃষিপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত কৃত্রিম রাসায়নিক দ্রব্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মানব স্বাস্থ্য,পরিবেশ ও মাটি রক্ষা করা,মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা ও অনুজৈবিক কার্যাবলী বৃদ্ধি করা,মৃত্তিকাস্থ অনুজীবের কার্যাবলী বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসলের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা,দীর্ঘমেয়াদি মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ ও পিএইচ কে সুনির্দিষ্ট করা,স্থানীয় উদ্ভিজ ও প্রাণীজ জৈব উপাদানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা,সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ফসলের পোকামাকড় ও রোগজীবাণু দমন করা,প্রাকৃতিক জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা, ফসল উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় সব ধরনের রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।অর্গানিক ফার্মিংয়ে জৈব সারই ফসলের খাদ্য উপাদানের মূল ভিত্তি তবে এক্ষেত্রে স্যুয়ারেজ বর্জ্য ব্যবহার করা যাবেনা।গোবর,কম্পোস্ট,ভার্মি কম্পোস্ট, খামারজাত সার,সবুজ সার,খৈল, গৃহস্থালি আবর্জনা থেকে পচা সার প্রভৃতি জৈব সার হিসেবে মাটিতে প্রয়োগ করা হয়। এসব সারে ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান উৎকৃষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান।জৈব সার মাটির বিভিন্ন ভৌতিক গুণাবলী যেমন মাটির গঠন,বুনট,সংযুক্তি ও পানি ধারণ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় এবং সেই সঙ্গে মৃত্তিকাস্থ উপকারী জীব (কেঁচো) ও অনুজীবের কার্যাবলী বৃদ্ধি করে।অর্গানিক ফার্মিংয়ে অফ সিজনে ধইঞ্চা,শন পাট প্রভৃতি লাগানো হয়। পরে এগুলো মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সবুজ সার তৈরি করা হয়, যা মাটির পুষ্টিমানকে বেশ সমৃদ্ধ করে।অর্গানিক চাষাবাদে দৈহিক ও যান্ত্রিক উপায়ে আগাছা দমন এবং সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করা হয়।এক্ষেত্রে আলোক ফাঁদ,বিষটোপ ফাঁদ,সেক্স ফেরোমেন ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করা হয়।জমির আইলে বাঁশ পুঁতে দিলে পাখি বসে পোকা ও কীট খেয়ে পোকা দমনে সাহায্য করে।এছাড়া উদ্ভিজ কীটনাশক যেমন বিষকাটালি দ্রবণ,আতা পাতার দ্রবণ,মরিচ দ্রবণ ও নীম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি বিবেচনায় রেখে ‘সাংরি-লা এগ্রো ফার্ম’টিকে অর্গানিক ধাঁচে গড়ে তোলা হয়েছে।রংপুর শহর থেকে কাছেই ফতেপুর,দর্শনায় ঘাঘট নদীর পার ঘেঁষে এটির অবস্থান।এখানে বিভিন্ন ধরনের ফল-ফলাদির পাশাপাশি লতাগুল্ম,ফুল,ওষধি,বনজ গাছের ব্যাপক সমাহার ঘটানো হয়েছে।মৌসুমি ফল ছাড়াও বছরের বিভিন্ন ঋতুতে এখানে নানান প্রজাতির এবং নানান রঙের ফুল ফুটে বাগানটিকে দর্শনার্থিদের কাছে আকর্ষনিয় করে তোলে। ‘সাংরি-লা অর্গানিক এগ্রো ফার্ম’ এ চাষাবাদের জন্য সার হিসাবে কম্পোষ্ট,ভার্মি কম্পোষ্ট,গোবর সার,স্লারি,সবুজ সার এসব ব্যবহার করা হয়েছে।এছাড়া দৈহিকভাবে আগাছা দমনের পাশাপাশি রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে।ফার্মে গাছের ডালে হাড়ি বেঁধে পাখীর আবাস সৃষ্টির মাধ্যমে পোকা দমনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।‘সাংরি-লা’য় আপনারা স্বাগতম।