১. স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে অবাধ আত্মবিকাশ, ভাব ও সংস্কৃতির আদান প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান এবং স্বাধীনতাকে জনজীবনে ফলপ্রসূ করে তোলার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করা উদীচীর লক্ষ্য।
২. উদীচী স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে নিয়োজিত থাকতে এবং যুগযুগের সাম্রাজ্যবাদী সংকীর্ণ, বিকৃত এবং অপসংস্কৃতির পরিবর্তে জাতীয় সংস্কৃতির সঠিক বিকাশের অনুক‚ল পরিবেশ সৃষ্টিতে বদ্ধপরিকর।
৩. সমাজে মেহনতি মানুষের মুক্তিতে যেহেতু সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সার্বিক মুক্তি নিহিত, সেহেতু মেহনতি মানুষের সার্বিক মুক্তির চেতনাকে লক্ষ্যরে ভেতরে রেখে উদীচী তার সকল কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
৪. উদীচী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও এর পুনরুজ্জীবনে সচেষ্ট থাকবে।
৫. উদীচী বিশ্বের যেকোনো দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সে ধারার অনুসারী, যে ধারা জীবনমুখী এবং সমাজ ও মানুষের প্রকৃত কল্যাণ-অভিসারী।
৬. উদীচী চায় জাতীয়স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সকল মানুষের অসাম্প্রদায়িক জাতীয় ঐক্য। উদীচী যে জাতীয়তাবাদের অনুসারী সে জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ জাত্যাভিমানের পঙ্কিলাবর্তে নিক্ষিপ্ত নয়।
৭. উদীচী চায় ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে সারা দেশবাসীর মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্ক।
৮. যেহেতু যুদ্ধ বিশ্বমানব, মানবতা, সভ্যতা ও সংস্কৃতির দুশমন, সেহেতু উদীচী যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও বিশ্বশান্তির পক্ষে তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনে সর্বোতভাবে তৎপর থাকবে।
৯. দেশের সকল প্রথিতযশা ও সম্ভাবনাময় শিল্পী সাহিত্যিক নাট্যকার ও কবির সৃজনশীল কর্মপ্রয়াসকে সুখী সুন্দর সমাজ বিকাশের স্বার্থে উদীচীর কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা উদীচীর আদর্শ-উদ্দেশ্যের অঙ্গীভূত।
১০. নিরক্ষরতা সমাজ বিকাশের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। নিরক্ষরতা দূরীকরণ ব্যতীত যেমন কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পূর্ণতা কল্পনা করা যায় না, তেমনি স্বাক্ষরতা ব্যতীত সভ্য জাতির বিকাশও কল্পনা করা যায় না। সমাজজীবন থেকে নিরক্ষরতার বিলুপ্তি সাধন তাই উদীচীর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
১১. আমাদের দেশের যুগপ্রাচীন ঐতিহ্যসম্পৃক্ত সংস্কৃতির প্রায় বিলীয়মান বিভিন্ন রূপের (যেমন- কবিগান, যাত্রা, বাউল, জারি-সারি ইত্যাদি) আবহমানকালের উৎসব অনুষ্ঠানের (যেমন- নৌকাবাইচ, নবান্ন উৎসব, বৈশাখী মেলা, পৌষ সংক্রান্তির মেলা, শীতের পিঠা, মাছ ধরার উৎসব, জাতিসত্তাসমূহের বিভিন্ন উৎসব ইত্যাদি) দেশীয় বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের (যেমন- বাঁশি, সানাই, খঞ্জনি, একতারা, ঢাক, ঢোল, খোল, করতাল, দোতরা ইত্যাদি) পুনরুজ্জীবন ঘটানো, এগুলোকে কালোপযোগী করা এবং এসবের ব্যাপক প্রচলন ঘটানো উদীচীর অন্যতম লক্ষ্য।
১২. দেশের প্রকৃত সাংস্কৃতিক ধারাকে উদীচী বিশ্বের দরবারে সগৌরবে তুলে ধরার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাবে। শুধু নগরীর চৌহদ্দির ভেতরেই নয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উদীচীর উদ্যোগে নাটক, নৃত্য, বিচিত্রানুষ্ঠান ইত্যাদি এবং সে সঙ্গে চিত্র প্রদর্শনী, সংগীতের আসর, সভা-সেমিনার, আলোচনাসভা অনুষ্ঠান ও পত্রপত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করবে উদীচী।
১৩. আমাদের এ ভূখণ্ডে বসবাসরত বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকে লালন, বিকাশ ও সমৃদ্ধ করার জন্য উদীচী তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করছে।
১৪. উদীচী বাংলাদেশের সকল শিল্পীর উপযুক্ত সামাজিক ও আর্থনীতিক মর্যাদা অর্জনে এবং তাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্যোগী হবে।
১৫. উদীচী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে প্রয়োজনানুসারে দেশের অন্যান্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে ভাবের আদান প্রদান এবং সহযোগিতামূলক তৎপরতা চালিয়ে যাবে।
১৬. উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দেশের সকল শিল্পীর পেশাগত অসুবিধাসমূহ ও তাদের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশের পথে যেসব অন্তরায় বিদ্যমান সেসব দূরীকরণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
১৭. উদীচী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংগীত, নাটক, নৃত্য, চারু-কারুকলা শিক্ষার বিদ্যালয় গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
১৮. উদীচী তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন লোকসংস্কৃতির জীবনমুখী ধারাকে প্রাধান্য দেবে, তেমনি আমাদের ঐতিহ্যের অঙ্গীভ‚ত সঠিক সংস্কৃতিধারার জীবনবাদী অনুসৃতি ও নবায়ন ঘটাবে।
১৯. সমাজজীবনকে বিপথগামী ও কলুষিত করতে পারে দেশে এ জাতীয় অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে উদীচী দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
২০. সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম চলচ্চিত্র শিল্পকে অর্থলোভী ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্ত করা ও চলচ্চিত্রে আমাদের সমাজবাস্তবতার যথার্থ প্রতিফলন ঘটিয়ে সুখী সমাজ গঠনে এর ভ‚মিকাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য উদীচী জনমত গঠনে প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।
২১. বাংলাদেশের সকল জাতীয় দিবস যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করা উদীচীর কর্মসূচির অঙ্গীভূত। এছাড়াও উদীচী তার ঘোষণাপত্র ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আন্তর্জাতিক দিবসসমূহ সাধ্যানুযায়ী পালন করবে।
২২. দেশের যেকোনো দুর্যোগ উদীচী তার সাধ্যানুযায়ী মোকাবিলা করবে।
২৩. উদীচী তার সকল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশ ও জাতির আশা-আকাক্সক্ষাকে অবিকৃতভাবে তুলে ধরবে এবং দেশ ও জাতিকে এক সুখী সুন্দর সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করবে।
২৪. আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে স্যাটেলাইট সংস্কৃতির প্রবল প্রভাবে আচ্ছন্ন বাঙালি সংস্কৃতি। দেহসর্বস্ব, কুরুচিপূর্ণ অসুস্থ বিনোদনের এই সর্বগ্রাসী প্রভাব রোধ করার জন্য সমান্তরাল সুস্থ-সংস্কৃতির ধারা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের জন্য উদীচী সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলবে।