সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপত্যতের মধ্যে সবার আগে যে স্থাপত্যটি সবার নজর কাড়ে তা হলো ‘সেলিম-আল দীন মুক্তমঞ্চ’। মুক্তমঞ্চটি পাহাড়ের পাদদেশে না হলেও এটি ওই আদলেই তৈরি। লাল সিরামিক ইটের তৈরি মঞ্চটি ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে মুক্ত আকাশের নিচে গ্রীক এরিনা বা ওপেন এয়ার মঞ্চের আদলে মুক্তমঞ্চের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রিক আদলে বাংলা ও ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের মঞ্চ নির্মাণ করা হয়।
সেলিম আল-দীন, মোস্তফা মনোয়ার ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর পরিকল্পনায় এবং স্থপতি আলমগীর কবিরের নকশায় ১৯৯২ সালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমানের সময় এ মঞ্চটি নির্মাণ করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীরের সময়ে নাট্যাচার্য সেলিম আল-দীনের নামে মুক্তমঞ্চটির নামকরন করা হয়।
মুক্তমঞ্চের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি নির্মাণ করা হয়েছে এমনভাবে, যেন মুক্তমঞ্চের স্টেজ থেকে সংলাপ বললে সামনের ও পেছনের সারিতে বসে সমানভাবে শোনা যায়। মঞ্চের বিন্যাস, ডিজাইন ও শব্দের অনুনাদের সঙ্গে মিল আছে বলেই চারদিক থেকে শব্দ শোনা যায়।
এ মঞ্চটির রয়েছে ১৪টি সিঁড়ি এবং ১ হাজার ২০০টি আসন। বিশ্ববিদ্যায়ের কেন্দ্রিয় খেলার মাঠসংলগ্ন জায়গায় এ মুক্তমঞ্চটির অবস্থান। এ মঞ্চকে ক্যাম্পাসের সংস্কৃতিচর্চার এক উর্বর ভূমি বলা হয়ে থাকে। এ মঞ্চে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা নাট্য সংগঠনের নাটক পরিবেশিত হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি চর্চার প্রধান কেন্দ্র এ মুক্তমঞ্চটি কয়েক দশক ধরেই এ দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সযত্নে লালন করে আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ মুক্তমঞ্চে নিয়মিত নাটক, সঙ্গীত, গল্প, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, আনন্দন, জলসিড়ি, বাংলা নাট্য দল, জুডো, ধ্বনি ইত্যাদি। বিশেষ করে নাট্য সংগঠনগুলো তাদের নাটকের মাধ্যমে মঞ্চটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটি জনপ্রিয় ও আগ্রহের স্থানে পরিণত করেছে। বিভিন্ন বিভাগের পুনর্মিলনী, শিক্ষা সমাপনী উৎসব (র্যাগ), বিশ্ববিদ্যালয় দিবস এ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার প্রতি বছরই আয়োজন করে থাকে সপ্তাহব্যাপী নাট্য পার্বণের।
সেলিম আল-দ্বীন, হুমায়ুন ফরীদি, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফারুক আহমেদ, সজল ও সুমাইয়া শিমুর মতো অসংখ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের শৈশবের স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই মুক্তমঞ্চের সাথে । এক সময় যাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল এই মক্তমঞ্চ।