ভ্রমণ পিয়াসীদের পদভারে মুখরিত মধুটিলা ইকোপার্ক
শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় স্থাপিত ‘মধুটিলা ইকোপার্ক এবারের শীত মৌসুমে ভ্রমনপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। সীমান্তবর্তী এই পার্কের চারপাশে উচু-নিচু পাহাড়ীটিলা আর সবুজের সমারোহ দেখতে ইকোপার্কটিতে এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভ্রমনপিয়াসীরা ভীড় জমাচ্ছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমেশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারীভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। স্থাপনকাল থেকেই শীত মৌসুমে এ পার্কে পর্যটকরা ভীড় জমিয়ে আসছেন।
এই পার্কটির প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাসতার ডান পাশে খোলা প্রানতর আর দু-পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাসতা। এর পরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য । পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর ষ্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা।
কর্তৃপক্ষ জানায়; ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ চার হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেষ্ট হাউজ। এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়।
এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ী পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশু-পাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙের গোলাপের বাগান।
সরকার প্রতি বছর এ পার্ক থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার রাজস্ব আয় করলেও পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কোন প্রকার অর্থ ব্যয় করছে না। তিনানি টেংরা খালী থেকে নন্নী বাজার হয়ে পার্ক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশসতকরণ, ১টি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনসহ পার্কটি পরিচ্ছন্ন ও নিরাপওা কর্মী রাখা জরুরী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইকোপার্কটি জীববৈচিত্র ও বিভিন্ন প্রাণীর সমাহার ঘটিয়ে যেভাবে সাজানোর কথা ছিল এখনও তার কিছুই হয়নি। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টির অভাবে সম্ভাবনাময় ইকোপার্কটির সম্ভাবনা মস্নান হতে বসেছে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষ প্রকৃতির অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে বারবার এ পার্কে ছুটে আসে। বিনোদন ও পাহাড়ী এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য পার্কটি বিশাল ভূমিকা রেখেছে। সম্ভাবনাময় এ পার্কটির প্রতি নজর দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মধুটিলা রেঞ্জকর্মকর্তা জিল্লুর রহমান আকন্দ বলেন, বিশাল এ পার্কটির নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে মাত্র ১ জন ফরেষ্টার, ২ জন গার্ড ও ২ জন মালি। রেষ্ট হাউজ থেকে দিন প্রতি সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হলেও এর পরিচ্ছন্নতার জন্য কোন বরাদ্দ নেই।
ইকোপার্কটি সীমানতবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দুরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমানতবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখান থেকে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখারও সুযোগ রয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দুরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর আসতে হবে। শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যনত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। এ ছাড়াও শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেলযোগে মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। অথবা নিজস্ব গাড়ীতে সরাসরি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুর পেঁৗছানোর আগে নকলা উপজেলা থেকে নালিতাবাড়ী সদর হয়ে ইকোপার্কে আসা সহজ হয়। সব মিলিয়ে শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সাড়া বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসীদের ভীড় লেগেই থাকে।