প্লায়োসিন যুগে বঙ্গ ভূখন্ডের বেশির ভাগ গঠিত হয় আর প্লাইসটোসিন যুগে এ অঞ্চল মানুষ বসবাসের উপযোগী হয়। পৃথিবীতে নরাকার জীবের বির্বতন ঘটে প্লায়োসিন যুগে আর এর পরের প্লাইসটোসিন যুগে প্রজ্ঞাবান মানুষের আর্বিভাব ঘটে।
নরাকার জীবের কঙ্কাল এশিয়ার তিনটি জায়গায় পাওয়া গেছে, ভারতের উত্তর পশ্চিম কেন্দ্রস্থ শিবলিক গিরিমালা, জাভা ও চীনের চুংকিঙ; এই তিনটি স্থান সরলরেখা দ্বারা সংযুক্ত করলে যে ত্রিভুজ সৃষ্টি হয় বঙ্গ তার কেন্দ্রস্থলে পড়ে। মানুষের প্রকরণ বিকশিত করতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বঙ্গের।
সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল এ দেশে কাল প্রবাহে এসেছে নিগ্রোটা, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মোঙ্গল, আর্য ও সেমেটিক জাতিগোষ্ঠী। তাদের মিশ্রণে গড়ে ওঠেছে বাংলার সংস্কৃতি।
যাদের মায়ের মুখের ভাষা বাংলা এমন জনগোষ্ঠীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় বৈদিক সাহিত্যে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে বঙ্গবাসীদের বয়াংসি বা পক্ষী জাতীয় বলে বর্ণনা করা হয়। পাখি ছিল তাদের টোটেম।
নদীমাতৃক বঙ্গ কৃষিপ্রধান অঞ্চল। কৃষিকেই ঘিরে আবর্তিত হয়েছে বঙ্গের সংস্কৃতি। কৃষি সংস্কৃতি বিষয়ক আধুনিকতম দর্শন হচ্ছে পারমাকালচার, স্থায়ী কৃষির স্থায়ী সংস্কৃতি। পারমাকালচারের জনক বিল মরিসনের মতে, প্রকৃতির বিরুদ্ধে নয় বরং প্রকৃতির সাথে যুথবদ্ধভাবে কাজ করার দর্শনই পারমাকালচার।
একটি স্থায়ী কৃষি নির্ভরশীল সংস্কৃতিই পারে টেকসই পৃথিবী গড়ে তুলতে। যে স্থায়ী কৃষি সংস্কৃতি মানব সভ্যতা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত প্রজ্ঞাবান মানুষকে এই পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে পারবে।
আসুন শুধু পহেলা বৈশাখের দিন বাঙালি না হয়ে বছরের প্রতিটি দিন জীবন যাপনে বাঙালি হই। বয়াংসি বা বঙ্গ বা বাংলার সংস্কৃতির উন্নয়ন ঘটাই।
খাদ্যবন তৈরি করতে ৭ টি স্তরে বাগান করতে হয়-
১.বড় আকৃতির ফল গাছের স্তর- সফেদা
২.ছোট আকৃতির ফল গাছের স্তর- ডালিম
৩.ঝোপাকৃতি গাছের স্তর- বাদাম
৪.বহুবর্ষজীবী সবজি ও লতাপাতা স্তর- পটল
৫.শিকড় এবং কন্দ জাতীয় গাছের স্তর- মূলা
৬.জমি ঢেকে রাখে এমন লতানো গাছের স্তর- কলমি শাক
৭. গাছ বেয়ে ওঠা লতানো গাছ ও পরজীবী উদ্ভিদ স্তর- গাছ কচু
বাংলাদেশে চট্ট্রগ্রাম অঞ্চলের লাল গরু, ‘র্নথ বেঙ্গল গ্রে’ নামের উত্তর বঙ্গের জেলাগুলোর গরু, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও পাবনাই জাতের গরু আছে। ‘ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট’ জাতের ছাগল আছে।
আউশ মৌসুমের ধান- ধারিয়াল, দুলার, হাশিকলমী, কটকতারা, কুমারি, পানবিরা, কালামানিক, শনি, শংকবটি, ষাইটা, জাগল, কালোবকরি, ভইরা, মূলকে আউশ, ভাতুরী, দুধেকটকী, কাদোমনি, খরাজামরি ইত্যাদি।
আমন মৌসুমের ধান- দাদখানি, দুধসর, হাতিশাইল, ইন্দ্রশাইল, যশোবালাম, লতিশাইল, পাটনাই, ঝিংগাশাইল, তিলককাচারী, বাদশাভোগ, কাটারীভোগ, কালিজিরা, রাধুনিপাগল, বউআদুরী, চিনিগুড়া, মহোনভোগ, বড়চালানী, দিঘা, বাঁশফুল ইত্যাদি।
বোরো মৌসুমের ধান- খৈয়াবোরো, জাগলীবোরো, টুপাবোরো, মুখকালালী, গঞ্জালী, কালোসাইটা, সোনালীবোরো, তুফান, টেপাবোরো, বলংগা, ষাটেবোরো, বোয়ালীবোরো ইত্যাদি।
স্থানীয় ধানের জাত- রায়েদা, লক্ষ্মীবিলাস, হনুমানজটা, নোনাকুর্চি, পাকড়ী, ঝিংগাশাইল, লালঢেপা, যশোয়া, তিলকাবুর, চিনিসাগর, সোনামুখী, কালোমেখী, সূর্যমুখী, খেজুরঝুপি, কলসকাটি, দুলাভোগ, পোড়াবিন্নি, শিলগুড়ি, কাটারীভোগ, দাদখানি, রাধুঁনিপাগল, মহিষদল, মাটিচাক, বটেশ্বর, ফুলবাদাল, হরিলক্ষ্মী, সরিষাজুরি, মধুশাইল, ফুলমালা, বাঁশফুল, কটকতারা, সরিষাফুলি, বাইলাম, ঘিগজ, রাজাশাইল, মধুমালতী, যাত্রামুকুট, বাবইঝাঁক, জলকুমারি, গান্ধীভোগ, লেবুশাইল, ফুলমুক্তা, বেনামুড়ি, পাটজাগ, কালামানিক, হরিঙ্গাদিঘা।
তরুণ দার্শনিক ব্রাত্য রাইসু লিখেছেন
“অপ্রয়োজনের সংস্কৃতি ~
সংস্কৃতি মাত্রই সংস্কার। সংস্কারকে কুসংস্কার বলা হইল অন্ধতা। বিজ্ঞান পূজারিদের কেজো অন্ধতা।
জগত কেবল কর্মের ভিত্তিতে যাপনের বিষয় নয় এবং সঠিকতাই সংস্কৃতি নয়। তাই যদি হইত তবে বৈজ্ঞানিকরাই বড় সংস্কৃতিবান হইতেন।
সংস্কৃতিতে অপ্রয়োজন প্রয়োজনের অধিক গুরুত্ববহ। প্রয়োজনের সংস্কৃতি হইল ব্যবসার সংস্কৃতি। পুঁজির পূজা।”