প্রাকৃতিক সৌন্দর্য-ঘেরা নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার জবাই বিল। ঐতিহ্যবাহী এই বিলটির প্রকৃত নাম দামুর মাহিল বিল। জবাই গ্রামের পাশদিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পরবর্তীতে এর নামকরন হয়েছে জবাই বিল। সরকারী রেকর্ড অনুযায়ী এই বিলের আয়তন ৯শ’৯৭ একর। বর্ষাকালে বৃদ্ধি পেয়ে এর আয়তন হয় প্রায় ৩হাজার একর। বিলটি উত্তরে ভারতের সাথে সাথে সম্পৃক্ত হয়ে দক্ষিনে পুনর্ভবা নদীতে মিলিত হয়েছে। নিকট অতিতে শীতের সময় জবাই বিলে সুদুর সাইবেরিয়া সহ শীত প্রধান বিধিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি কল কাকলিতে বিলটি মুখরিত থাকত। সে সময় রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সৌখিন পাখি শিকারীরা শিকারে আসতেন এই বিলে। প্রকৃতি নির্ভর এই বিলে প্রাকৃতিকভাবে জম্ম নেয়া বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ, যেমন বোয়াল, আইড়, ঘাগর, গজার, সৌল, তিচল, পাবদা, টেংরা, খলিসা, ভেদা, সহ অসংখ্য মাছে বিল পরিপূর্ন হয়ে থাকত। তখনকার দিনে মানুষ চৈত্র-বৈশাখ মাসে বিলের কিছু অংশের কচুরী পানা পরিস্কার করে গ্রামাঞ্চলের মাছ ধরার যন্ত্র চাক, পলই, হাঁটা জাল, বেড়জাল সহ বিভিন্ন প্রকার যন্ত্র দিয়ে বিল হতে প্রাকৃতিক মাছ ধরত। ১০/১৫ কেজী ওজনের বোয়াল, চিতল সৌল, আইড় মাছ ধরা পড়ত তাদের মাছ ধরার যন্ত্রে। হরেক রকম কাঁটাযুক্ত জলজ উদ্ভিদে ঢেঁকে থাকত সারা বিল। কোথাও পানির দেখা মিলতনা। কালের আবর্তনে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গত ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে বিলটিকে তৎকালীন সরকারের নীতিমালার আওতায় এনে খাজনার মাধ্যমে এলাকার মৎসজীবীদের মাঝে প্রথম ইজারা দেয়া হয়। এর পর ১৯৯৬ সালে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে ও নীতিমালাও পরিবর্তন করে জাল যার জলা তার’নীতি ঘোষনা দওয়া হয় ফলে মৎস আইন ভংগ করে ইচ্ছানুযায়ী বিল থেকে পোনা মাছ সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ নির্বিচারে নিধন হতে থাকে। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী এক সফরে সাপাহারে এলে এখানকার অসহায় মৎসজীবীদের কথা চিন্তা করে তাদের ভাগ্যোন্নয়নে ৩ কোটি ৫৫লাখ টাকা ব্যায় স্বাপেক্ষে এই বিলটিকে একটি বৃহৎ মৎস্য প্রকল্প হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষনা দেন। সে অনুযায়ী এলাকার প্রায় দেড় হাজার মৎস্যজীবীদের একটি তালিকা তৈরী করে ২০০০ সালের ১১ সেপ্টম্বর মাসে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষামুলক ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিভিন্ন প্রজাতির পোনামাছ ওই বিলে অবমুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আবারও সরকার পরিবর্তনের ফলে ২০০১ সালের ২১ সেপ্টম্বর সরকারী ভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বিলে পোনামাছ ছাড়ার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়। ফলে ওই বিলে মৎস্যচাষ প্রকল্পটি তখনকার মত ভেস্তে গিয়ে পুনরায় জাল যার জলা তার নীতি অবলম্বন করে এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণ বিল হতে পোনামাছ সহ সব ধরনের মাছ আবারো নির্বিচারে নিধন করে। একসময় মৎস্যজীবীদের ভাগ্যোন্নয়নে গড়া বৃহৎ এই মৎস্য প্রকল্পটি একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে আবারো সরকার বদল হলে মৎস্যজীবীদের উন্নয়নে দ্বিতীয় বারের মত প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এ সময় নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ মৎস্য সেক্টর সৎস্য অধিদপ্তর সহ তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আনুষ্ঠানিক ভাবে সে সময়ের জানুয়ারী মাসে পুনরায় পোনামাছ দ্বিতীয় বারের মত অবমুক্ত করেন। সে সাথে বিল হতে যাতে কোন মাছ চুরি না হয় সে জন্য উপজেলা মৎস্য বিভাগকে কঠোর প্রহরা সহ যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।