বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পটভূমিঃ
বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর এবং বগুড়া জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা ভৌগলিকভাবে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় শক্ত লাল মাটি এ অঞ্চলের উল্লেখ্যযোগ্য বৈশিষ্ট্য।
রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চল ২৪ ডিগ্রী ২৩ মিনিট হতে ২৫ ডিগ্রী ১৫ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮ ডিগ্রী ২ মিনিট হতে ৮৮ ডিগ্রী ৫৭ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। বরেন্দ্র অঞ্চলে রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে মধ্য জুন হতে অক্টোবরের প্রারম্ভ পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজমান। নভেম্বর হতে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। এ অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫০০ মিঃমিঃ হতে ২০০০ মিঃমিঃ। তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রী হতে ৪৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মোট চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৪.৪ লক্ষ একর, যার মধ্যে ৩৪% দোঁআশ, ১০% বেলে, ৪৯% কাদা এবং ৭% অন্যান্য জমি। চাষাবাদযোগ্য জমির মধ্যে ৮৪% এক ফসলী, ১৩% দো-ফসলী এবং অবশিষ্ট ৩% তে-ফসলী জমি। ফসলের নিবীড়তা ১১৭%।)
রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মান ১৯৪৭ সালে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উন্নত ছিল। বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলিকাতার সাথে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল। এ অঞ্চল কলিকাতা নদী-বন্দরের পশ্চাৎ ভূমি ছিল এবং ব্যবসা বানিজ্য কলিকাতা নির্ভর ছিল।)
দেশ বিভাগের পর কলিকাতার সাথে ব্যবসা-বানিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং সমগ্র আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে। দেশের অন্যান্য অঞ্চল এমনকি রাজধানী ঢাকার সাথেও সড়ক পথে ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। সময়ের সাথে সাথে বরেন্দ্র অঞ্চল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়ে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম খুব বেশী বিস্তার লাভ করেনি। ফলশ্রুতিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলের জীবন যাত্রার মান নীচে নেমে যায়।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে ১৯৮৫ সনে সরকার “সমন্বিত বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্প” শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। ১৯৯০ সনে বরাদ্দকৃত তহবিলের মাত্র ২৬% ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষিত হয়। প্রকল্প সমাপ্তির পর প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি পূনঃ বিবেচনা করা হয় এবং উন্নয়ন কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে “বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ” নামক সংস্থা ১৯৯২ সনের ১৫ই জানুয়ারীতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয়। যাত্রার শুরু হতে কর্তৃপক্ষ এ যাবৎ ৩০(ত্রিশ)টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।