ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার একটি গ্রাম। প্রকৃতি তার সবটা উজাড় করে ঢেলে দিয়েছে এখানে। সবুজ শ্যামলই এখানে চোখে পড়বে বেশি। গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর। কালশাহ দিঘি নামে পরিচিত ২০ একর জমির উপর খননকৃত এই পুকুরটিকে স্থানীয়ভাবে 'কালশাহর দিঘি' নামেও ডাকা হয়ে থাকে। গ্রামের শ্রীবৃদ্ধি করেছে মূলত এই পুকুরটিই। পুকুরের চারপাড়েই বর্তমানে রয়েছে জনবসতি। এর বাইরেও গ্রামের সর্ব উত্তরে রয়েছে একটি 'বিল'। এটি ছোট্ট পরিসরের বিল হলেও; গ্রামের বাসিন্দারা তাদের শিশু বয়সে বিলের প্রকৃত আনন্দই পেয়ে থাকে। শাপলাও ফুটতে দেখা যায় এ বিলে। বর্ষায় বিলের পানি উপচে গ্রামের কিছু অংশের ফসলী জমি নষ্ট হলেও, এটি বন্যাকবিলিত এলাকা নয়। বলা হয়ে থাকে, ৮৮ এর বন্যাও এই গ্রামকে ছুঁয়ে যায়নি। তবে শীতকালে ওই বিলেই দলবেঁধে গ্রামের মানুষকে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। গ্রামের উত্তর-পূর্ব পাশে রয়েছে একটি 'খাল'। গ্রামটির ঢালিবাড়ি অংশ থেকে শুরু হয়ে খালটি শেষ হয়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রাম লংগাইরের প্রথমাংশে। অনেকটা সীমানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে এটি। গফরগাঁও থেকে মাইজবাড়ী হয়ে পাগলা যাওয়ার পথে লংগাইরের ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়ে বলা যায়, সামনে বলেশ্বরটিও আলাদা করেছে কয়েকটি গ্রামকে। বলেশ্বরের উত্তরের অংশে মাইজবাড়ী। এখানেও রয়েছে বসতি। উত্তর দিক থেকে এসে এই বসতির শেষাংশই বাঘবাড়ীর। আর গ্রামের পশ্চিমে অংশে মাইজবাড়ী থেকে গফরগাঁও যাওয়ার পথের পশ্চিম অংশে কিছুটা বাঘবাড়ী ও কুকশাইর। বর্ণনার ভেতরের অংশটিই মাইজবাড়ীর। একটি গ্রামকে প্রকৃতি ও উপরওয়ালা যা দিয়ে থাকেন, তার সবটাই পেয়েছে এই গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে যেমন শিল্পপতি আছেন, আছেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও। পুলিশের সাবেক এক ডিআইজি ও বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক এক কোচ এই গ্রামেরই। গ্রামের প্রায় অধিকাংশের পেশা শিক্ষকতা হলেও ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ বিভাগও প্রায় তাঁদের নিয়ন্ত্রণে। গ্রামের শিক্ষিত যুবকেরা সমাজ সচেতন। ঐক্যের ভিত শক্ত। পৌরসভার বাইরে বর্তমান গফরগাঁওয়ের সেরা হাইস্কুলের তকমাটিও এই গ্রামেরই। মাইজবাড়ী হাতেম তাই উচ্চ বিদ্যালয় সেরার তকমাটি ধারাবাহিকভাবেই ধরে রেখেছে। গ্রামটিতে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা দুই। দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে একটি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪ টি মসজিদ ও ২ টি হাফেজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। ভিন্ন ধর্মের কেউ না থাকায় অন্য কোন উপাসনালয় নেই। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মধ্যে মাইজবাড়ী ব্যাজারটিই সেরা। রাত দিন ২৪ ঘণ্টাই এখানে মানুষ থাকে। গ্রাম হলেও বাসিন্দাদের চলাচল অনেকটা শহুরে। তবে যারা গ্রামে থাকেন, তারা পুরোটা শহরের নয়। গ্রামের শীতল ছায়ায়, তাদের হৃদয়ও শীতল। একে অপরের প্রতি অন্য রকমের মায়া তাদের মধ্যে। মাইজবাড়ী গ্রামের আরেকটি ঐতিহ্য হচ্ছে, বৈশাখী মেলা। মেলাটি বৈশাখী হলেও, চৈত্র মাসের শেষ শুক্রবারে এটি হয়ে থাকে। অনেকটা ঈদ উৎসবের মতোই। যাদের বসবাস গ্রামের বাইরে, যারা গ্রাম বাসীর আত্মীয় স্বজন; তাঁদের অধিকাংশই মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর মানুষও। গ্রামের রাজনৈতিক ক্লাবটিও গফরগাঁওয়ের রাজনীতিতে বিস্তর প্রভাব রেখে থাকে। সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও।