১৯৫২ সালে, মরিচ পাশা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
তারপর থেকেই মরিচ পাশা গ্রামের জনগণ একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭২ সালে, লে: মতিয়ার রহমান (জন্মঃ ০১ ডিসেম্বর, ১৯৩৬, মৃত্যুঃ ০৫ মে, ১৯৮৬) সাহেব মোল্লার মাঠের জনসভায় অত্র এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। জনসভায় মরিচ পাশা গ্রামের আব্দুল ওহাব সরদার (মৃত্যুঃ ১৩ আগষ্ট, ২০১৫) উপস্থিত ছিলেন। তিনি গ্রামে এসে জনসভায় লে: মতিয়ার রহমান সাহেবের একান্ত ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেন।
তখনই গ্রামবাসী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য বৃদ্ধা মহিলার(আনুর মা) নিকট তার টিনের গোয়াল ঘর অনুদান হিসাবে চায়। অগ্রমনা মহিলা গ্রামবাসীর প্রস্তাবে রাজি হন। গ্রামবাসী মরিচ পাশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে মরিচ পাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে। পরবর্তীতে, গ্রামবাসী দীঘলিয়ার এক হিন্দুব্যক্তির নিকট থেকে আরো একটি টিন শেড ক্রয় করে। তাছাড়া গ্রামবাসী বিদ্যলয়ের জন্য সাধ্যমত দান করে, তখন প্রায় ১০০০০.০০ (দশ হাজার) টাকা প্রয়োজন ছিল। তখন বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত ছিল না। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান চলত।
পরবর্তীতে আড়পাড়া গ্রামের প্রগতিমনা ব্যক্তি সৈয়দ নুরুল আজম (বাবু মীর) আড়পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে নায়েব আলী-সৈয়দ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চান। নায়েব আলী ও সৈয়দ আলী ছিল তার পিতা ও চাচা।
এ উদ্দেশ্যে তিনি বরিশাল যান (তখন নড়াইল ছিল বরিশাল বোর্ডের অধীন) এমপিও ভুক্তির জন্য। কিন্তু অত্র এলাকায় (তিন কিলোমিটার ক্যাচমেন্ট এরিয়া) একটি বিদ্যালয় (মরিচ পাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়) থাকায় স্বীকৃতি মেলে না।
দুই গ্রামের জনগন তখন সম্মিলিত বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব করলে নামকরণ নিয়ে বিপত্তি বাধে। আড়পাড়া গ্রামের জনগন বিশেষত নুরুল আজম(বাবু মীর) চাচ্ছিলেন নামটা নায়েব আলী-সৈয়দ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় হোক আর মরিচ পাশা গ্রামের জনগন চাচ্ছিল আগের নামই অর্থাৎ মরিচ পাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকুক।
এই বিপত্তি সমাধানের জন্য নড়াইল মহাকুমা’র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান সাহেব মহোদয়ের স্বীকৃতির প্রয়োজন পড়ে। মরিচ পাশা গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিশেষত মৃত: রাফিঊদ্দীন সরদার, মৃত: মো: আমীর হোসেন (স্যার), মৃত ডা: মহাসীন জমাদ্দর সহ আরো অনেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান সাহেব মহোদয়ের নিকট যান। তিনি প্রথমে অস্বীকৃতি জানালে্ও পরবর্তীতে মো: আমীর হোসেন(স্যার) ও আব্দুল ওহাব সরদারের সাথে সাক্ষাৎ করে স্বীকৃতি প্রদান করেন। উল্লেখ্য, আব্দুল মান্নান সাহেব মহোদয় ছিলেন আব্দুল ওহাব সরদারের সহপাঠী।
উক্ত স্বীকৃতিপত্র ও লে: মতিয়ার রহমান সাহেবের একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালেই বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়।
তখন নুরুল আজম(বাবু মীর) বর্তমানে স্থাপিত বিদ্যালয়ের জমির বৃহৎ অংশ দান করেন ও মরিচ পাশা গ্রামের জনগন বাকি জমি ক্রয় করেন। তাছাড়া অবকাঠামো স্থাপনের জন্য মরিচ পাশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত অবকাঠামোটি স্থানান্তর করা হয়। এছাড়াও উভয় গ্রামের জনগনের সাধ্যমত অনুদান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল অত্র এলাকার আজকের এই সনামধন্য বিদ্যাপীঠ ‘মরিচ পাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’।