কিভাবে যাবেন! বিস্তারিত আলোচনা।
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি মুছাপুর ক্লোজার। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ সীমানায় বঙ্গোপসাগরের একেবারে কোল ঘেঁষে এই মুছাপুর ক্লোজার ও ছোট ফেনী নদীর অবস্থান। এখানে সবুজ প্রকৃতি, বণ্যপ্রাণি, পাখির ঝাঁক, ফরেস্ট বাগান, ফেনী নদীর মাঝে ক্লোজার, ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর, জেলেদের উচ্ছ্বাস আর সাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি মিলে নয়াভিরাম এক সৌন্দর্যের জগৎ।
সাগরে যখন জোয়ারের পানি উতলে উঠে তখন অনন্য এক সৌন্দর্য বিকশিত হয় মুছাপুর ক্লোজরের ছোট ফেনী নদীতে। তটরেখায় আছড়ে পড়ে ছোট-বড় ঢেউ। প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩ কিলোমিটার প্রস্থের সমুদ্র সৈকতের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ রয়েছে। একটু দাঁড়ালেই হারিয়ে যাবেন ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকার বহরে ও সাগরে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্যের মাঝে।
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার বর্তমানে এখানে নোয়াখালী ও পাশ্ববর্তী ফেনী জেলার প্রকৃতি প্রেমিদের উপছে পড়া ভিড় দেখা যায়। সকাল হলেই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শণার্থীরা মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস, পিকআপ নিয়ে চলে আসে মুছাপুর ক্লোজারের ছোট ফেনী নদীর তীরে। বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা বনভোজনের জন্য মাইক, স্পিকার নিয়ে আসে। নব দম্পতিরা নদীর পাড়ে ও ফরেস্ট বাগানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জগতে হারিয়ে যায়।
জানা গেছে মুছাপুর ক্লোজারটি পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য উপজেলার বনবিভাগ কর্মকর্তা (রেঞ্জ) প্রধান বন সংরক্ষক বরাবরে ২০১৫ সালে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
#যেভাবে_আসবেন
নোয়াখালী জেলা শহর থেকে যে কোন গাড়িতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বসুরহাট বাজারে চলে আসতে হবে। বসুরহাট থেকে যাতায়াতে মুছাপুর ক্লোজার পর্যন্ত দুই-তিনটি পাকা সড়ক রয়েছে।
অপরূপ সৌর্ন্দয্যরে লীলাভূমি
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার বিচ্ছিন্ন এই মুছাপুর ক্লোজারের প্রাণ কেন্দ্র থেকে ট্রলার যোগে দক্ষিণে যাওয়ার সময় দেখা যায় বনবিভাগের ফরেস্ট বাগানটি দাঁড়িয়ে আছে। বাড়তি এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শোভাবর্ধন করে পর্যটন কেন্দ্র সৃষ্টির আশায়। চারপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকমের বনজ গাছ নিয়ে। এখানে আসলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কোলাহল, বিশাল সমুদ্র সৈকত, সূর্যে্যদয় ও সূর্যাস্তসহ নানান সৌন্দর্যের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমীরা ইচ্ছা করলে এ চরে এসে ঘুরে যেতে পারেন।
মুছাপুর ফরেস্ট বনাঞ্চল
মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় চরের মধ্যে দক্ষিণ মুছাপুর মৌজায় ৮শ ২১ দশমিক ৫৭ একর, চরবালুয়া (দিয়ারা) মৌজায় ১হাজার ৮শ ৬১ দশমিক ১০ একর ও চরবালুয়া মৌজায় ৬শ দশমিক ১৫ একর সর্বমোট ৩হাজার ২শ ৮২দশমিক ৮২একর বনবিভাগের জমি জুড়ে মনোরম বনাঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে মুছাপুর ফরেস্ট বাগানটি অন্যতম। এই ফরেস্ট বাগানে রয়েছে ঝাউ, কেওড়া, পিটালী, খেজুর, লতাবল, গেওয়া, শনবলই, বাবুলনাটাই, আকাশমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। এখানে রয়েছে ঘুঘুসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখির অভয়স্থল। শীতের মৌসুমে সুদূর থেকে আসা অতিথি পাখিরাও এখানে আসতে ভুল করে না। এখানে পরিকল্পিতভাবে ফরেস্ট বাগানটি শুরু হয় ১৯৬৯ সালে। কোন হিংস্র পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বন বিড়াল, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু ও পাখি। তবে সাপগুলো নিশাচর। এছাড়া বন্য মহিষ, গরু, ভেষাও দেখা যায়। এই বাগানের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া সোরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে এ যেন আরেকটি ভূবন। বনের ভেতরেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এক খণ্ড শীতল ছায়া বিশিষ্ট মাঠ। ইচ্ছে করলে এখানে একটু জিরিয়ে নেয়া যায়। পাশে রয়েছে বিশাল সমুদ্র সৈকত। এখানকার প্রকৃতি পর্যটকদের কানে কানে বলে দেয়, ভ্রমণ করো, উপভোগ করো, শিখো, মানুষ হও মানুষ-প্রকৃত মানুষ। পর্যটক ও প্রকৃতি প্রেমীরা ইচ্ছা করলে এ মুছাপুর ক্লোজারে এসে উপভোগ করতে পারেন।
সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার যথাযথ উন্নয়ন ও মুছাপুর ক্লোজারকে সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি হবে, তার পাশাপাশি পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণতৃষ্ণা মেটাতে মুছাপুর ক্লোজার হতে পারে মনোরম অবকাশ কেন্দ্র।
সংগ্রহকৃত পোস্টঃ(