“পূর্বধলা”---
নেত্রকোনা জেলার অন্তর্গত ৩০৮.০৩ বর্গ কিমি আয়তন বিশিষ্ট একটি উপজেলা।নেত্রকোনা জেলার একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পূর্বধলা উপজেলা।এই উপজেলায় প্রায় ১৩০ একর বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও মনোরম “রাজধলা” নামক একটি বিল আছে। জনশ্রুতি আছে উক্ত বিলের পূর্ব পার্শ্বে তৎকালীন থানা গঠিত হওয়ায় অত্র থানার নামকরণ করা হয় পূর্বধলা থানা ।পূর্বধলা থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
পূর্বধলার উত্তরে দুর্গাপুর ও ধোবাউড়া উপজেলা, দক্ষিণে গৌরীপুর উপজেলা, পূর্বে নেত্রকোনা সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে ফুলপুর ও গৌরীপুর উপজেলা।এ উপজেলায় গারো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয়ের মধ্যে রাজধলা বিল, ধলাই, সোয়াই, মোগরা, কালীহর, কংশ ও লাউয়ারী নদী এবং মান্দারুয়া, সিংগুয়ার, আখতার, ও আখতার বিল উল্লেখযোগ্য।
পৌরসভা-১টি, ইউনিয়ন-১১, মৌজা-২২৩, গ্রাম-৩৩৪,
পূর্বধলা উপজেলার ইউনিয়নগুলো হলো--
১।পূর্বধলা সদর
২।খলিশাপুর
৩।গোহালাকান্দা
৪।ঘাগড়া
৫।জারিয়া
৬।ধলামুলগাঁও
৭।নারান্দিয়া
৮।।আগিয়া
৯।বিশকাকুনী
১০।বৈরাটি
১১।হোগলা
প্রাচীন ঐতিহ্য---
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুগল আমলে নির্মিত সুনাইকান্দা ও লেটিরকান্দা মসজিদ, হোগলার প্রাচীন মন্দির, বাঘবেড় ও নারায়ণডহর জমিদার বাড়ী।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি---
পাগলপন্থী মতাদর্শের জনক করম শাহ্ এবং তাঁর পুত্র টিপু শাহ্ এই উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামে ১৭৯২ সালে বসতি স্থাপন করেন এবং এখান থেকে পাগলপন্থী বিদ্রোহ ও কৃষক বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। ১৭৮৬ সাল থেকে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে শেরপুর পরগনায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ২৯ এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাক হানাদাররা পূর্বধলায় প্রবেশ করে। ১ মে পূর্বধলার স্বনামধন্য ডাক্তার হেম বাগচী, তার ভগ্নীপতি হরিদাস সিংহ ও কাজের লোক মেঘুকে বাড়ীর আঙ্গিনায় নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (ত্রিমোহনী)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৭, মন্দির ২৭। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: পূর্বধলা বাজার জামে মসজিদ, হোগলা নৃসিংহ জিউ আখড়া মন্দির।
শিক্ষার হার---
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৫.৫৮%; পুরুষ ৩৮.৩৮%, মহিলা ৩২.৭১%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৪, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পূর্বধলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৯), শ্যামগঞ্জ হাফেজ জিয়াউর মহা বিদ্যালয় (১৯৭২), পূর্বধলা রাবেয়া আলী মহিলা কলেজ (১৯৯৪), পূর্বধলা জগৎমনি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), এন জারিয়া ঝাঞ্জাইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), খলিশাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬২), নারায়নডহর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭০), দেওটুকোন হাইস্কুল (১৯১৯)রাগিব মজিব উচ্চ বিদ্যালয়(১৯৯৫)।
১৯৭১ সালে পূর্বধলার সর্বস্তরের জনগণ স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখে। ১১ নং সেক্টর কমান্ডার এবং জাসদের প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল তাহের এই উপজেলাই জন্মগ্রহণ করেন।